কখনও ভেবেছি দেশের ঋণ শোধ করবো কীভাবে ?
শারমিন আকতার:
পৃথিবীতে এমন অনেককিছু আছে যারা শুধু দিয়েই যায়; কখনও নেওয়ার কথা বলে না। আসলে সবকিছু কি বলে কয়ে হয়? কিছুতো নিজেকেও বুঝে নিতে হয়। এই যেমন ধরুন একটি গাছ আপনাকে কী না দিচ্ছে।
গাছটির সবকিছুই আপনি নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করছেন। এমনকি যে নিশ্বাসটি প্রতিমুহূর্তে নিচ্ছেন তার উৎসও এই গাছ। একবার ভাবুনতো যদি সব গাছ আমরা কেটে ফেলি, নতুন আরেকটি না লাগিয়ে; তাহলে আমরা কি বাঁচতে পারবো?
কথাটা বলছিলাম মূলত অন্য একটি কারণে। যে দেশে আমরা জন্মেছি, যার আলো-বাতাসে আমরা বেড়ে উঠছি। আবার একসময় এই দেশের মাটিতেই আমরা চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়বো। জীবনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যার কাছ থেকে সবকিছু নিলাম, তাকে কি কখনও কোনোকিছু দেওয়ার চিন্তা করেছি? এই দেশ এই মাটি কখনও কি আমাকে বলবে, ‘তোমার জন্ম, বেড়ে উঠা, মৃত্যু সবকিছু এখানেই হচ্ছে। এজন্য আমাকে কিছু দিতে হবে। আমি চাই, তুমি আমার সমস্ত ঋণ শোধ করে দাও’। মা কি তার সন্তানকে কখনও বলে, ‘তোমাকে আমি জন্ম দিয়েছি, বড় করেছি। এবার তুমি আমার সমস্ত কষ্টগুলো দূর করে দেবে’।
ঠিক তেমনি মায়ের মতো এদেশ কখনও বলবে না তার সমস্ত ঋণ শোধ করে দিতে। এজন্যই আমাদের দায়িত্বটা আরও বেশি। যদি নির্দিষ্ট করে দায়িত্বটুকু ভাগ করে দিতো। তাহলে বিষয়টা হতো একরকম। যেটুকু আছে তা করে দিলেই শেষ। কিন্তু বলেনি বলেই দায়িত্বটি শতগুণ বেড়ে গেল। এদেশ আমার আরেক মা। তার ঋণ আমরা কীভাবে শোধ করবো, কখনও কি ভেবেছি?
আজ আমি আমার সেই ভাবনাগুলো আপনাদের সাথে বিনিময় করবো। এই আশায় যে, আপনারাও নতুনকিছু ভাবতে পারবেন।
একদিন একটি মার্কেটে গেলাম বান্ধবীদের নিয়ে। হঠাৎ কোনো একটি দোকান থেকে হিন্দী গান শুনতে পেয়ে মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল। সবাই মিলে সেই দোকানে গেলাম। আর লোকটিকে জিজ্ঞেস করলাম, সে একজন বাংলাদেশী হিসেবে তার দেশের জন্য কী করছে? লোকটি খুব অবাক হয়ে বলল, সামান্য দোকানদার হয়ে সে দেশের জন্য কী করতে পারে? তখন আমি তাকে বললাম, যদি তিনি হিন্দী গান বন্ধ করে আমাদের দেশের শিল্পীদের গান বাজান; তাহলে তার বাড়তি সিডিও বিক্রি হবে, আর অন্যদিকে দেশের জন্য দায়িত্ব পালনের কাজটিও হয়ে যাবে। এরপর তিনি কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তা আমি জানি না।
প্রত্যেককে যার যার অবস্থান থেকে তার দেশের জন্য কিছু একটা করতেই হবে। এজন্য তাকে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। আমরা যাকিছু করি; তা যেন আমার দেশের ক্ষতি না করে, এ বিষয়টা অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
পেশার ক্ষেত্রে ছোট-বড় বলে কিছু নেই। সততা, যোগ্যতা এবং আনুগত্য প্রকাশের মাত্রার উপরই নির্ভর করছে একজন মানুষের প্রকৃত যোগ্যতা এবং সেখানেই লুকিয়ে আছে তার সাফল্যের বীজ। উদ্ধত আচরণ দিয়ে ভালোকিছু করা যাবে না। তা সে নিজের কিংবা দেশের কারোরই উপকারে আসবে না।
=====